মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও লিওন ট্রটস্কির ভূমিকা

মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও লিওন ট্রটস্কির ভূমিকা

ভূমিকা: ২০শ শতাব্দীর সূচনালগ্ন ও রাশিয়ার সমাজ–অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট

বিশ্ব ইতিহাসের মোড় ঘুরে গিয়েছিল ১৯১৭ সালের অক্টোবর মাসে। সেই বিপ্লব কেবল একটি দেশের রাজনৈতিক পালাবদল নয়, বরং মানবসভ্যতার দিকনির্দেশ পাল্টে দিয়েছিল। ইতিহাসে একে বলা হয় মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব—যা প্রথমবারের মতো শ্রমিক শ্রেণীর হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা এনে দেয়, ব্যক্তিমালিকানার শৃঙ্খল ভেঙে সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের প্রথম পদক্ষেপ তৈরি করে। এর কেন্দ্রে ছিলেন ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন, আর তার কৌশলগত সংগঠন ও বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান কারিগর ছিলেন লিওন ট্রটস্কি।

রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী সমাজে তখন শোষণ, বৈষম্য ও দুর্ভিক্ষ ছিল নিত্যসঙ্গী। কৃষকরা জমিদারদের দাসত্বে ক্লান্ত, শ্রমিকরা কারখানায় ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করেও অন্ন পেত না। সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ (প্রথম বিশ্বযুদ্ধ) রাশিয়ার অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়, কোটি কোটি সৈন্য নিহত ও ক্ষুধার্ত কৃষক-শ্রমিকরা দেশে ফিরে দেখে—শাসকেরা আগের মতোই মদ্যপান করছে, কিন্তু জনগণ মরে যাচ্ছে রুটি ও শান্তির অভাবে। এই পরিস্থিতিই রাশিয়ায় বিপ্লবের বীজ রোপণ করে।

জারতন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদ ও শ্রমিক শ্রেণীর উত্থান

১৯শ শতাব্দীর শেষ থেকে রাশিয়ার পুঁজিবাদ দ্রুত বিকশিত হচ্ছিল। বিশাল কারখানা, রেলপথ, খনি ও শিল্পকেন্দ্র গড়ে ওঠে—বিশেষত পেত্রোগ্রাদ (পূর্বতন সেন্ট পিটার্সবার্গ), মস্কো, ও উরাল অঞ্চলে। কিন্তু এই বিকাশ মূলত বিদেশি মূলধননির্ভর ছিল—ফরাসি, ব্রিটিশ ও জার্মান পুঁজিপতিরা রাশিয়াকে অর্ধ-উপনিবেশে পরিণত করেছিল। ফলে রাশিয়ার শ্রমিক শ্রেণী দ্রুত সংহত হতে থাকে, একইসাথে দারিদ্র্য ও শ্রেণীবিরোধ তীব্র হয়।

১৯০৫ সালের বিপ্লব রাশিয়ার প্রথম বৃহৎ রাজনৈতিক জাগরণ। সে বছর শ্রমিকরা “রুটি, শান্তি ও স্বাধীনতা”র দাবিতে রক্তাক্ত আন্দোলন চালায়। “ব্লাডি সানডে”–তে রাজা দ্বিতীয় নিকোলাসের সৈন্যরা নিরস্ত্র শ্রমিকদের গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু এই ব্যর্থ বিপ্লবও ছিল পরবর্তী বিপ্লবের “রিহার্সাল”—যেমন লেনিন পরবর্তীতে বলেছিলেন। সেই ১৯০৫-এই প্রথম গঠিত হয়েছিল “সোভিয়েত”—অর্থাৎ শ্রমিক পরিষদ—যা পরে অক্টোবর বিপ্লবের সময় রাষ্ট্রের প্রাথমিক রূপে পরিণত হয়।

ফেব্রুয়ারি বিপ্লব ও দ্বৈত ক্ষমতার জন্ম

১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারতন্ত্র ভেঙে পড়ে। নারীরা রুটি চেয়ে মিছিলে নামে, শ্রমিকরা ধর্মঘট করে, সৈন্যরা বিদ্রোহে যোগ দেয়। এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয় “অস্থায়ী সরকার”—যার নেতৃত্বে ছিল বুর্জোয়া ও উদারপন্থীরা। কিন্তু একইসাথে শ্রমিক-সৈন্যদের হাতে গড়ে ওঠে পেত্রোগ্রাদ সোভিয়েত, অর্থাৎ এক বিকল্প ক্ষমতার কেন্দ্র। এর ফলে সৃষ্টি হয় “দ্বৈত ক্ষমতা” (Dual Power)—একদিকে অস্থায়ী বুর্জোয়া সরকার, অন্যদিকে শ্রমিকদের সোভিয়েত।

অস্থায়ী সরকার জনতার কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল শান্তি, ভূমি ও রুটি; কিন্তু তারা যুদ্ধ চালিয়ে যায়, জমিদারদের স্বার্থ রক্ষা করে, আর কৃষক ও শ্রমিকদের দাবিকে উপেক্ষা করে। এই অবস্থায় বিপ্লবী পরিস্থিতি পরিপূর্ণভাবে পরিণত হচ্ছিল, কেবল দরকার ছিল সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব—যে নেতৃত্ব এই দ্বন্দ্বকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাবে।

বলশেভিক পার্টি, লেনিনের “এপ্রিল থিসিস” ও বিপ্লবের দিকনির্দেশ

লেনিন নির্বাসন থেকে ফেরেন এপ্রিল ১৯১৭-এ। ফিনল্যান্ড স্টেশনে তাঁর বিখ্যাত বক্তৃতায় তিনি বলেন—“সমস্ত ক্ষমতা সোভিয়েতের হাতে!” তাঁর “এপ্রিল থিসিস” ছিল বলশেভিক কৌশলের মোড় ঘোরানো ঘোষণা। সেখানে তিনি বলেন:

১) যুদ্ধ বন্ধ করে অবিলম্বে শান্তি স্থাপন,

২) জমিদারদের জমি কৃষকদের হাতে হস্তান্তর,

৩) ব্যাংক ও শিল্পকে রাষ্ট্রায়ত্তকরণ,

৪) বুর্জোয়া সংসদ নয়, বরং সোভিয়েত রাষ্ট্রব্যবস্থা।

লেনিন বুঝেছিলেন, অস্থায়ী সরকার জনগণের নয়—এটি বুর্জোয়া স্বার্থের ধারক। কিন্তু একইসময়ে তিনি জানতেন, বিপ্লব শুধু ইচ্ছায় ঘটে না; এর জন্য চাই সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দিকনির্দেশ, সংগঠন ও কৌশল। এই পর্যায়েই ট্রটস্কির ভূমিকা ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

ট্রটস্কির রাজনৈতিক ও সংগঠনমূলক ভূমিকা

লিওন ট্রটস্কি (১৮৭৯–১৯৪০) ছিলেন মার্ক্সবাদী চিন্তাবিদ, বিপ্লবী কৌশলবিদ ও পরবর্তীতে লাল বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ১৯০৫ সালের বিপ্লবে পেত্রোগ্রাদ সোভিয়েতের সভাপতি ছিলেন, এবং তখন থেকেই তাঁর তত্ত্ব ছিল—“অবিরত বিপ্লব” (Permanent Revolution)—যেখানে তিনি যুক্তি দেন যে, অর্ধ-সামন্তবাদী সমাজে বুর্জোয়া বিপ্লব অসম্পূর্ণ থাকবে যতক্ষণ না শ্রমিক শ্রেণী ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং সমাজতান্ত্রিক রূপান্তর ঘটায়।

এই তত্ত্বটি পরে অক্টোবর বিপ্লবে বাস্তব রূপ লাভ করে। ফেব্রুয়ারি বিপ্লব বুর্জোয়া বিপ্লব হলেও, এর অব্যবস্থাপনা ও অস্থিরতা শ্রমিকদের সামনে এক নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত করে। ট্রটস্কি বলেন, “বিপ্লবের গতি কখনো থেমে থাকে না; এটি অবিরাম অগ্রসর হতে থাকে, যতক্ষণ না সমাজের সমস্ত দমন ও শোষণ বিলুপ্ত হয়।”

ট্রটস্কি ১৯১৭ সালের মে মাসে রাশিয়ায় ফিরে আসেন এবং দ্রুত বলশেভিকদের সঙ্গে যোগ দেন। জুলাই মাসে তিনি পেত্রোগ্রাদ সোভিয়েতের সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ও বক্তৃতা ছিল অসাধারণ। বিপ্লবের চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে তিনি ছিলেন “সামরিক–বিপ্লবী কমিটি”র (Military Revolutionary Committee) প্রধান, যা অক্টোবর বিপ্লবের বাস্তবায়নের মূল কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

অক্টোবর বিপ্লব: ঘটনাপ্রবাহ ও সশস্ত্র অভ্যুত্থান

১৯১৭ সালের অক্টোবর (রাশিয়ার পুরনো ক্যালেন্ডারে ২৫ অক্টোবর, নতুন ক্যালেন্ডারে ৭ নভেম্বর) রাতে ইতিহাসের সেই মহান মুহূর্ত আসে। পেত্রোগ্রাদে বলশেভিক নেতৃত্বাধীন সোভিয়েত বাহিনী একে একে টেলিগ্রাফ অফিস, ব্যাংক, ব্রিজ, স্টেশন, এবং সরকারি ভবন দখল করতে থাকে। অস্থায়ী সরকার ছিল প্রায় বিচ্ছিন্ন ও নিস্তেজ। ট্রটস্কির নেতৃত্বে সামরিক–বিপ্লবী কমিটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পুরো অভিযান পরিচালনা করে।

লেনিন তখন গোপনে পেত্রোগ্রাদে অবস্থান করছিলেন; বিপ্লবের রাতে তিনি স্মলনি ইনস্টিটিউটে উপস্থিত হয়ে ঘোষণা দেন—“কর্মীদের এবং কৃষকদের বিপ্লব সফল হয়েছে!” ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি শ্রমিক–কৃষক–সৈন্য সোভিয়েত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। পরের দিন বলশেভিকরা ঘোষণা করে:

* সমস্ত জমি কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা হবে,

* যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করা হবে,

* শ্রমিকদের জন্য ৮ ঘণ্টার কর্মদিবস চালু হবে,

* রাষ্ট্রব্যবস্থা হবে সোভিয়েত গণতন্ত্রভিত্তিক।

অক্টোবর বিপ্লব প্রমাণ করেছিল যে, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব কেবল স্বপ্ন নয়—এটি ইতিহাসের অবধারিত ধারা

শ্রমিক-সোভিয়েত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও প্রথম পদক্ষেপ।

লেনিনের নেতৃত্বে গঠিত হয় “জনকমিসারদের পরিষদ” (Council of People’s Commissars), যার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন ট্রটস্কি—তিনি ছিলেন বিদেশ বিষয়ক কমিশার। তাঁর দক্ষ কূটনীতি ব্রেস্ট-লিতভস্ক চুক্তির (১৯১৮) মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ করে রাশিয়াকে সাম্রাজ্যবাদী সংঘাত থেকে মুক্তি দেয়। যদিও এই চুক্তি ছিল কঠিন ও অসম, তবু এটি বিপ্লবী রাষ্ট্রকে রক্ষা করে পুনর্গঠনের সুযোগ এনে দেয়।

বলশেভিক সরকার জাতীয়করণ, জমি সংস্কার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠন, নারীসমতা এবং জনগণের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। প্রথমবারের মতো শ্রমিক শ্রেণী রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে শুরু করে। এ ছিল ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ঘটনা—যেখানে রাষ্ট্র আর দমনযন্ত্র নয়, বরং শ্রমিক শ্রেণীর হাতিয়ারে পরিণত হয়ে

গৃহযুদ্ধ, লাল বাহিনীর সংগঠন ও ট্রটস্কির নেতৃত্ব

বিপ্লবের পরপরই রাশিয়ার উপর নেমে আসে গৃহযুদ্ধের দুঃস্বপ্ন। “সাদা বাহিনী”—অর্থাৎ রাজতান্ত্রিক, বুর্জোয়া ও বিদেশি হস্তক্ষেপকারীরা বিপ্লবকে ধ্বংস করতে এগিয়ে আসে। তখন রাষ্ট্রের ভাগ্য নির্ভর করছিল এক সংগঠিত সামরিক শক্তির ওপর। এই পর্যায়ে ট্রটস্কি ছিলেন লাল বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সংগঠক।

ট্রটস্কি সামরিক প্রতিভার সঙ্গে শৃঙ্খলা, মনোবল ও বিপ্লবী স্পিরিটকে একীভূত করেন। তিনি রেলগাড়িতে করে ফ্রন্ট থেকে ফ্রন্টে ঘুরে সৈন্যদের উজ্জীবিত করতেন। তিনি বলতেন—“যে নিজের শ্রমিক রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে জানে না, সে সমাজতন্ত্র রক্ষা করতে পারবে না।” তাঁর নেতৃত্বেই লাল বাহিনী ১৯২০ সালের মধ্যে সাদা বাহিনী ও বিদেশি হস্তক্ষেপকারীদের পরাজিত করে।

এই গৃহযুদ্ধের বিজয়ে ট্রটস্কির সংগঠন দক্ষতা ও আত্মত্যাগ ছিল অনন্য। লেনিন নিজে তাঁকে “বিপ্লবের তলোয়ার” বলে অভিহিত করেছিলেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিপ্লবের বৈশ্বিক প্রভাব

অক্টোবর বিপ্লব কেবল রাশিয়ার সীমা পেরিয়ে যায়নি; এটি পুরো বিশ্বের শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের কাছে ছিল এক আশার বার্তা। মার্ক্সের তত্ত্ব বাস্তবে প্রমাণিত হয়—শ্রমিক শ্রেণী রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে পারে। ইউরোপে জার্মানি, হাঙ্গেরি, ইতালি, পোল্যান্ডে বিপ্লবী আন্দোলন জেগে ওঠে। এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় উপনিবেশবিরোধী সংগ্রাম নতুন অনুপ্রেরণা পায়।

বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের বহু বিপ্লবী তখন এই বিপ্লবের খবর পেয়ে নতুন পথ খুঁজে পান—মানবমুক্তির পথ।

লেনিন ও ট্রটস্কির নেতৃত্বে গঠিত হয় কমিন্টার্ন (Communist International)—যা আন্তর্জাতিক বিপ্লবের সংগঠন। এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়। এভাবেই অক্টোবর বিপ্লব বিশ্ববিপ্লবের সূচক হয়ে ওঠে।

লেনিন-ট্রটস্কি সম্পর্ক ও পরবর্তী বিতর্ক

লেনিন ও ট্রটস্কির মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য ছিল বিপ্লবের সময় গভীর, যদিও পূর্বে তাদের মধ্যে মতভেদ ছিল। লেনিন সংগঠনগত কেন্দ্রীকরণের পক্ষপাতী ছিলেন, আর ট্রটস্কি ছিলেন প্রথমদিকে কিছুটা সমালোচক। কিন্তু ১৯১৭ সালে বাস্তব পরিস্থিতি তাদের ঐক্যবদ্ধ করে। লেনিন বলেন, “ট্রটস্কি বুঝে নিয়েছেন যে বলশেভিক পার্টি ছাড়া বিপ্লব অসম্ভব।”

তবে লেনিনের মৃত্যুর পর (১৯২৪) পার্টির অভ্যন্তরে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। স্তালিন প্রশাসনিক শক্তি দখল করেন, আর ট্রটস্কিকে পরবর্তীতে নির্বাসিত করা হয়। কিন্তু ইতিহাসের দৃষ্টিতে ট্রটস্কি ছিলেন বিপ্লবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগঠক, তাত্ত্বিক ও সামরিক কৌশলবিদ। তাঁর “অবিরত বিপ্লব” তত্ত্ব পরবর্তীকালে চীন, কিউবা ও ভিয়েতনামের বিপ্লবেও প্রতিফলিত হয়।

ট্রটস্কি পরবর্তীতে বলেন—“রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র বিকৃত হয়েছে, কিন্তু বিপ্লবের আদর্শ অমর।” তাঁর হত্যাকাণ্ড (১৯৪০, মেক্সিকো) বিশ্ববিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়, কিন্তু তাঁর চিন্তা আজও প্রাসঙ্গিক।

বিপ্লবের ঐতিহাসিক শিক্ষা ও উত্তরাধিকার

অক্টোবর বিপ্লব আমাদের শেখায়—

১. রাষ্ট্রক্ষমতা দখল না করলে মুক্তি অসম্ভব।

২. শ্রমিক শ্রেণীর ঐক্য ও রাজনৈতিক দলই বিপ্লবের কেন্দ্রীয় শর্ত।

৩. বিপ্লব কেবল একটি দেশে সীমিত নয়; এর আন্তর্জাতিক চরিত্র রয়েছে।

৪. বিপ্লবের পর রাষ্ট্রকে রক্ষা করা, পুনর্গঠন করা, ও সমাজতান্ত্রিক নীতি অনুসারে পুনর্বিন্যাস করা—এটাই শ্রেণীসংগ্রামের ধারাবাহিক রূপ।

আজকের পুঁজিবাদী সংকট, বৈশ্বিক অসমতা, যুদ্ধ ও পরিবেশ ধ্বংসের যুগে অক্টোবর বিপ্লবের শিক্ষা আবারও প্রাসঙ্গিক। ট্রটস্কির মতো নেতারা দেখিয়েছেন—বিপ্লব কেবল স্লোগান নয়, এটি বিজ্ঞান, সংগঠন ও আত্মত্যাগের সম্মিলন।

উপসংহার:

মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব মানব ইতিহাসের এক উজ্জ্বল সূর্যোদয়। এটি প্রমাণ করেছিল—শ্রমিক শ্রেণী কেবল উৎপাদন করে না, তারা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে; তারা নতুন সভ্যতা নির্মাণের ক্ষমতা রাখে। লেনিন ছিলেন এই বিপ্লবের মস্তিষ্ক, ট্রটস্কি ছিলেন এর হৃদয় ও তলোয়ার।

অক্টোবর বিপ্লবের উত্তরাধিকার আজও জীবিত—কিউবা, ভিয়েতনাম, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকার মুক্তিসংগ্রাম, কিংবা বাংলাদেশের কৃষক আন্দোলনের ভেতরেও আমরা সেই আদর্শের প্রতিধ্বনি শুনতে পাই।

যেমন ট্রটস্কি একবার বলেছিলেন—

 “তোমরা হয়তো আমাকে হত্যা করবে, কিন্তু তোমরা ইতিহাসকে হত্যা করতে পারবে না। অক্টোবর বিপ্লবের আলো পৃথিবীর প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়বে।”

আজও সেই আলো মানবমুক্তির পথ দেখায়।

অক্টোবর বিপ্লব কেবল অতীত নয়—এটি ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি।

বদরুল আলম

৭ নভেম্বর ২০২৫ 

ঢাকা

Loading

Related posts