ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন সম্পর্কে র‍্যাডিকাল সোশ্যালিস্টের বিবৃতি


Details: Published on Tuesday, 01 March 2022 16:33Written by Radical Socialist


১। আমরা রাশিয়াকে একটি সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী শক্তি হিসেবে নিন্দা করছি। অতীতের সাম্রাজ্যের স্বপ্ন দেখিয়ে তারা সম্প্রসারণবাদের উপর ন্যায্যতা অর্পণ করতে চাইছে। আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, যে এই ঘটনা ভবিষ্যতে আন্য নানা সোভিয়েত ইউনিয়নের পরবর্তী দেশকেও আঘাত করতে পারে।

২। আমরা কোন কূটনীতির ভাষা ব্যবহার করি না, যেমন করি নি ইরাকে মার্কিণ আগ্রাসনের সময়ে। আমরা কোনো রাষ্ট্রসঙ্ঘের হস্তক্ষেপের ডাক দিই না,  বরং আগ্রাসী রাষ্ট্রের অবিলম্বে নিঃশর্ত প্রত্যাহারের দাবী করি।

৩। এই দাবী কেবল ২০২২ কে কেন্দ্র করে না। আমরা দাবি করি, ইউক্রেনের প্রতিটি ইঞ্চি জমি থেকে রাশিয়াকে ফিরে যেতে হবে। এর মধ্যে পড়ে ক্রিমিয়া, এবং পূর্ব ইউক্রেনের প্রদেশগুলিও। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা স্বীকার করি যে অধিকতর সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্যের দাবী ন্যায়সঙ্গত, যাতে ইউক্রেন অনেক বেশী গণতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৯২ সালে ক্রিমিয়ার নিজের সংবিধান ছিল, যা এই এলাকাকে অনেক বেশী স্বায়ত্ত্বশাসন দিয়েছিল, এবং কিয়েভের হাতে কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি কুচমা পরে অন্যায়ভাবে এই সংবিধানকে নাকচ করে দেন।  

৪। রাশিয়া সম্পর্কে আমাদের অবস্থান নেওয়ার সময়ে আমরা ন্যাটো কী করছে দেখি না। কিন্তু ন্যাটো সম্পর্কে আমাদের অবস্থান যা ছিল, তাই আছে। ন্যাটো একটি সাম্রাজ্যবাদী সামরিক হুমকি, যার কখনোই কোনো ন্যায্যতা ছিল না, এবং যা ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের পর একেবারেই বাতিল হওয়া উচিৎ ছিল।  সুতরাং আমরা এই নির্দিষ্ট পরিস্থিতে কোনোভাবে ন্যাটোর কাজের সমর্থক নই। কিন্তু আমরা বিশ্ব রাজনীতিকে বৃহৎ শক্তিদের মধ্যে দাবার ছক হিসেবে দেখি না, যেখানে এক মেকী ‘লেসার ইভলের’ স্বার্থে অন্যদের ‘আত্মত্যাগ’ করতে হবে।

৫। এটা বোধগম্য, যে আগ্রাসনের শিকার যে ইউক্রেনীয়রা, তাঁরা অন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিদের হস্তক্ষেপ চাইবেন, কারণ মার্কিণ এবং রুশ হস্তক্ষেপ, দুই ক্ষেত্রেই সেটা বারে বারে ঘটেছে। কিন্ততু আমরা সেরকম কোনো আবেদনকে সমর্থন করি না। আমরা মনে করি সেরকম কোনো আবেদন আক্রান্তদের পক্ষেও ক্ষতিকর, কারণ এই আবেদনের অর্থ একাধিক পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যে মুখোমুখি দ্বন্দ্বের আহ্বান, কোনো আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত কাঠামোর মাধ্যমে পদক্ষেপ নয়। পাঁচ শীর্ষ শক্তির নিরাপত্তা পরিষদে ভেটোর ফলে রাষ্ট্রসঙ্ঘের পক্ষে মধ্যবর্তী শক্তি হিসেবে কাজ করার কোনো ক্ষমতা নেই।

৬।   নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে আমাদের কোনো সার্বিক নীতিগত অবস্থান নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্যবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে আমরা সমর্থন করেছিলাম, যেমন আমরা ইস্রায়েলের ঔপনিবেশিক-বসতিকারী দখলদারির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পক্ষে। ১৯৯১এর যুদ্ধে বিধ্বস্ত ইরাকী রাষ্ট্রের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে আমরা সমর্থন করি নি, কারণ সে ছিল মানুষ মারা নিষেধাজ্ঞা, যা কোনো ন্যায়ের পক্ষে ছিল না, বরং আধা-গণহত্যার পরিস্থিতি তৈরি করে একটা দেশকে মার্কিণ সাম্রাজ্যবাদের পদানত করার উদ্দেশ্যে আনা হয়েছিল। পাশ্চাত্যের শক্তিরা এখন ইউক্রেন আক্রমণের জবাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একগুচ্ছ নয়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাদের কোনোটা কোনোটা হয়তো বাস্তবিক পুতিনের স্বৈরাচারী সরকারের যুদ্ধ করার ক্ষমতাকে কমাতে পারবে। অন্যগুলি হয়তো রাশিয়ার সাধারণ মানুষের ক্ষতি করবে, কিন্তু রাষ্ট্র বা তার অলিগার্কিকে বিশেষ আঘাত করবে না। কিন্তু যতক্ষণ এই সব নিষেধাজ্ঞা আন্তঃ-সাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া, গণ সংগ্রাম হেকে উহে আসা নয়, যেমনটা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার উপরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, ততক্ষণ আমরা বিবদমান দুই পক্ষের কাউকেই সমর্থন করি না।

৭। বিপ্লবী মার্ক্সবাদী ও আন্তর্জাতিকতাবাদী হিসেবে আমরা সমস্ত নিপীড়িত সংখ্যালঘু জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সমর্থন করি। সুতরাং, ইউক্রেনের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সমর্থন করার পাশাপাশি, আমরা ক্রিমিয়ার মানুষের এবং পূর্ব ইউক্রেনের প্রদেশগুলির মানুষের অধিকারকেও সমর্থন করি। তাঁরা যেন পুতিনের ‘ভালবাসার ছায়াতে’ বা ইউক্রেনের সামরিক হুমকিতে না,  গণতান্ত্রিকভাবে স্থির করতে পারেন, তাদের ভবিষ্যত কী হবে। 

৮। মোদী সরকার নির্লজ্জের মতো এই আগ্রাসনের নিন্দা করতে অস্বীকার করেছে। এই কাজ ইউক্রেনের সরকার ও জনমতকে ভারতের প্রতি ক্রুদ্ধ করেছে, এবং ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বা তাদের দ্রুত ঐ দেশ থেকে বের করে আনা কঠিন করে তুলেছে। এই সরকারের কাছে নিজের দেশের নাগরিকের নিরাপত্তার চেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে কূটনৈতিক লাভক্ষতির খেলা।

৯। বুর্জোয়া বিরোধী দলগুলি হয় চুপ করে আছে, অথবা কংগ্রেস দলের ক্ষেত্রে, কার্যত সরকারের থেকে তাদের অবস্থান আলাদা নয়।  

১০। সিপিআই(এম) রাশিয়া যা করেছে তাকে আগ্রাসন বলে চিহ্নিত করতে রাজি না, তারা একে কেবল ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেছে। সিপি আইএর সঙ্গে  মিলে তারা জোর দিচ্ছে মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর উপরে, যেন তারাই প্রধানত দায়ী। রাশিয়া নাকি কেবল তার প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এই যে শ্রেণী ভিত্তিক অবস্থানের অভাব, এটা ঐ দলগুলি ও আদের সমর্থক্রা যারা দিশা চাইছেন তাদের কোনো উপকার করে না, এবং সার্বিকভাবে বামপন্থীদের বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষতি করে।

১১। আমরা গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক ইউক্রেনের পক্ষে।

১২। যে বীর রুশরা যুদ্ধের দামামার বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছেন তাদের অভিনন্দন জানাই।

র‍্যাডিকাল সোশ্যালিস্ট, ২৮/০২/২০২২

Loading