Published on Tuesday, 08 February 2022 18:22 Written by Radical Socialist
গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারী দলিত আন্দোলনের নেতা শরদিন্দু উদ্দীপনকে ফেসবুকে সরস্বতী পুজা সম্পর্কে সমালোচনাত্মক পোস্ট করার ফলে নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিতভাবে থানায় তুলে নিয়ে যায়, দীর্ঘক্ষণ আটক রাখে, এবং এর পর ভারতীয় দন্ডবিধির ৫০৪ ও ৫০৫ দারায় অভিযুক্ত করে। প্রথমত এই ধারাগুলি ‘নন-কগনাইজেবল’, তাই জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ ছাড়া পুলিশ এফ আই আর পর্যন্ত করা আইনসিদ্ধ নয়। দ্বিতীয়ত, এই ঘটনা দেখাচ্ছে, একদিকে যে কোনো সংখ্যালঘু ধর্মীয় আচরণ সম্পর্কে প্রকাশ্য হামলাও এ দেশে পুলিশের নজর এড়ায়, আর অন্যদিকে, হিন্দু সবর্ণ আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে কেউ ফেসবুকে লিখলে পুলিশ তাঁর বাড়িতে ঝাপিয়ে পড়ে। এবং সে বিষয়ে পুলিশের সাম্প্রদায়িকরণ পশ্চিমবংগে অন্য রাজ্যের চেয়ে কম নয়। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশের এই বে-আইনী, কার্যত যে কোনো গুন্ডাবাহিনীর মতো বাড়িতে চড়াও হয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং মতপ্রকাশের অধিকার কেড়ে নিতে চেষ্টা করার নিন্দা করছি।
৭ই ফেব্রুয়ারী এই ঘটনার প্রতিবাদে এপিডিআর, আইপওয়া, আইসা ও অন্য বিভিন্ন গণসংগঠন এবং মানবাধিকার রক্ষা সংগঠন কামালগাছি এলাকায় প্রতিবাদ সভার ডাক দিলে পুলিশ সভার উপর হামলা করে এবং লাঠিপেটা করে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের অবশেষে ছাড়া হলে আবার বিক্ষোভ দেখান হয়, এবং পুলিশ হিংস্র লাঠিচার্জ করে ও নারী সংগঠন, ছাত্র সংগঠন সহ বিভিন্ন গণসংগঠনের কর্মীদের গ্রেপ্তার করে। লাল সেলাম স্লগান দেওয়ার জন্য প্রচন্ড মারা হয়। থানার ভিতরে চলে মারধর। মেরে রক্তাক্ত করা হলেও যথাযথ চিকিৎসা করা হয় নি।
আজ ৮ই ফেব্রুয়ারী তাদের বারুইপুর কোর্টে তোলা হয়। পুলিশের রেওয়াজ অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক অভিযোগ নয়, মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে এবং কোমরে দড়ি বেঁধে আনা হয়েছে, ঠিক ঔপনিবেশিক যুগের শেখা কায়দায়। আদালতে পুলিশ জামিনের বিরোধিতা করে, এবং আজকের মতো আবারও বন্দিদের জেলে রাখা হয়। বন্দীদের মধ্যে এমন ছাত্রীও আছে, যার কাল পরীক্ষা।
র্যাডিক্যাল সোশ্যালিস্ট এই সমগ্র প্রক্রিয়াকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করছে। আমরা মনে করি, যারা এই ঘটনার মধ্যে নিছক নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশের কুকীর্তি দেখছেন তাঁরা বাস্তব পরিস্থিতি থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখছেন। ফ্যাসিস্ট-হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্য উগ্র-দক্ষিণপন্থী দল, যেমন তৃণমূল কংগ্রেস, এবং তাদের পরিচালিত সরকার, কোনো মিত্র নয়। নরেন্দ্রপুর থানা পশ্চিমবঙ্গের বাইরে না, এবং রাজ্য সরকার কোন অন্যরকম অবস্থান নেয় নি। সমস্ত বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক শক্তিদের বুঝতে হবে, একজনের উপরে আঘাত সকলের উপরেই আঘাত। কারো মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় আক্রমণ হলে, অন্যদের সংহতি জানিয়ে লড়াই করতে হবে।
আমরা দাবী করছিঃ
· শরদিন্দু উদ্দীপনের উপর থেকে অভিযোগ তুলে নিতে হবে।
· ৭ই আক্রান্ত প্রত্যেককে অবিলম্বে ছেড়ে দিতে হবে ও মামলা তুলে নিতে হবে।
· নরেন্দ্রপুর থানার দোষী পুলিশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।
আমরা সকলকে আহ্বান করছি, আগামীকাল , ৯ই ফেব্রুয়ারী, কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা যে প্রতিবাদ মিছিল আহ্বান করা হয়েছে তাতে সামিল হতে দুপুর ২টোয় বিদ্যাসাগর মূর্তির পাদদেশে জমায়েত হতে।
র্যাডিকাল সোশ্যালিস্ট, পশ্চিমবঙ্গ, ৮ই ফেব্রুয়ারী ২০২২