পৃথিবীটা পেয়ে গেছে স্বর্গের মান।

সারারাত শিশিরে ভেজা ঘাসের উপরে

সকালে শিউলি ফুল ঝরে ঝরে পড়ে, 

আকাশে ভেসে যায় মেঘেদের ভেলা

কাশ ফুল বাতাসের সাথে করে খেলা। 

সাদা বলাকার সারি যায় উড়ে উড়ে,

শরতের সকালের সোনা রোদ্দুরে। 

গাছে গাছে পাখিদের সুমধুর গান

পৃথিবীটা পেয়ে গেছে স্বর্গের মান।

এসেছে আশ্বিন মাস পূজো এল কাছে,

নতুন পোশাক চেয়ে খোকা খুকু নাচে।

গ্রামে গ্রামে বাড়ি বাড়ি পড়ে গেছে সাড়া, 

পূজার সাজ চাই, কেনাকাটার তাড়া। 

ছোট ছোট ছেলে মেয়ে ঘোরে পিছু পিছু, 

বাবা বসে আছে আজ মাথা করে নিচু। 

মাঠে ঘাটে কাজ নাই হাত বড় ফাঁকা

কিনতেই হবে কিছু, চাই কিছু টাকা ।

হয়তো বেচতে হবে ছাগল বা গরু, 

চিন্তায় বাপটার বুকে দুরু দুরু। 

মায়ের মনে তাই করে ভয় ভয়, 

ছেলে মেয়ে দুটোকে না দিলেই নয়।

কাজ করে ঘন ঘন ছাড়ে নিশ্বাস, 

নিজের উপর নাই নিজের বিশ্বাস।

বিছানায় ঘুম নেই পাশ ফিরে থাকে, 

স্বামী স্ত্রী দুজনেই দুরত্ব রাখে, – 

ভোরে মোরগ ডাকে মসজিদে আজান, 

মাঠে জল না দিলে বাঁচবে না ধান।

গাঁয়ের মহাজন আছে হাত পেতে, 

ঋণ করে সার জল দিতে হয় ক্ষেতে। 

গতবার ধান বেচে হয়নি শোধ, 

এবার কি যে হবে? হচ্ছে না বোধ, 

নেমে আসে চারদিকে ঘন অন্ধকার, 

একে একে বন্ধ হলো মুক্তির দ্বার। 

মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে তাই, 

ভাবনার ঘুন পোকা কুড়ে কুড়ে খায়।

ছাগলের দড়ি খুলে নিয়ে যায় হাটে, 

পূজার পোশাক কিনে, যেতে হবে মাঠে, 

কিছু টাকা হাতে দিয়ে, নিতে হবে জল, 

নাহলে মার খাবে দুবিঘে ফসল।

তার বউ চিন্তায় কেঁদে কেঁদে মরে

হাতের সম্বল কিছু রইলো না ঘরে।

কীভাবে বাঁচবে তার সুখের সংসার

বিসর্জনের ঢাক বুকে বাজে বারবার!!

                                            অরবিন্দ চক্রবর্তী

                                       ২৩/৯/২৩

Loading